বাবরি মসজিদ/অযোধ্যা মামলা নিয়ে কাল ০৯/১১/২০১৯ সকাল ১০:৩০ মিঃ এ সুপ্রিম কোর্টের রায় আসছে। অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা সাথে যতটা না ধর্মের সম্পর্ক, তারচেয়েও অনেকবেশি রাজনীতির সম্পর্ক- একথা প্রমাণিত সত্য। অযোধ্যাকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। আগামীর রায়কে কেন্দ্র করেও সারা দেশজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। যেসমস্ত রাজ্যগুলিতে বিজেপি এখনো ক্ষমতায় আসতে পারেনি, সেইসমস্ত রাজ্যগুলিতে পরিকল্পিত দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটিয়ে বিজেপি ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টা করতে পারে। কারণ বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানই হল বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং পরবর্তী পরিকল্পিত দাঙ্গার মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ঘটিয়ে। তাই সারাদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আপামর ভারতবাসী তথা বাংলার মানুষের সতর্কতা অবলম্বন অত্যন্ত জরুরি। তাই আসুন, আমরা সচেতন হই, মানুষকে আগত বিপদ থেকে সচেতন করি।
সচেতন থাকুন, সতর্ক থাকুন, সজাগ থাকুন। রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে বিজেপি আর এস এস। এজন্য তারা বিভিন্ন ফাঁদ তৈরি করে চলেছে। সেই ফাঁদে পা না দিতে নিজে সচেতন থাকুন, অন্যকে সচেতন করুন। বিজেপি আর এস এস-এর ফাঁদগুলি জানার চেষ্টা করুন, বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনার উত্তেজিত হওয়ার অর্থই হল ষড়যন্ত্রকারীদের সাফল্য। বিজেপি আর এস এস-এর ষড়যন্ত্রের সম্ভব্য ফাঁদগুলি মোটামুটি এরকমঃ
১) মন্দিরে-মসজিদে গরু-শুয়োরের মাংস ফেলে উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা হতে পারে। কিংবা ধর্মস্থানে অন্যকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। হঠাৎ করেই এরকম ঘটনার সম্মুখীন হলে, নিজে উত্তেজিত হবেন না। অন্যকেও উত্তেজিত হতে দেবেন না। মাথা ঠান্ডা রেখে প্রশাসনকে খবর দিন।
২) মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু লোক সাম্প্রদায়িক শ্লোগান দিতে পারে। যেমন- মন্দির ওহী বানায়েঙ্গে , গাই খানে বালে পাকিস্তান যাও, ভারত কো হিন্দু রাষ্ট্র বানায়েঙ্গে- ইত্যাদি ইত্যাদি। হ্যাঁ, এই শ্লোগানগুলি শুনে একদমই উত্তেজিত হবেন না। প্রয়োজনে আপনার স্মার্ট ফোনে ভিডিও রেকর্ডিং করে থানায় জমা দিন।
৩) বাসে ট্রেনে ট্রামে অটোতে চায়ের দোকানে বাজারে ঘাটে সম্প্রদায় বিদ্বেষী কথা আলোচিত হতে পারে। যেমন- কাটারা খুব হারামি, এদের পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিতে হবে, নেড়েদের শিক্ষা দেওয়া উচিত ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলি শুনে উত্তেজিত হয়ে তর্কে বা ঝামেলায় জড়াবেন না। এক্ষেত্রেও আপনি আপনার মোবাইলে ভিডিও রেকর্ডিং করে থানায় জমা দিন।
৪) পাড়ায় সম্প্রদায় বিদ্বেষী গান বাজতে দেখে উত্তেজিত হয়ে প্রতিবাদ করার প্রয়োজন নেই। এমন গান শুনলে থানায় খবর দিন।
৫) সোশ্যাল মিডিয়া অর্থাৎ ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ইসলাম, রসুল (সাঃ) এবং মুসলিমদের সম্পর্কে কুরুচিকর পোষ্ট দেখে উত্তেজিত হয়ে অন্য ধর্মকে গালিগালাজ করে উত্তেজনা বাড়াবেন না। প্রয়োজনে স্ক্রিনশট নিয়ে থানায় জমা দিন। মনে রাখবেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য এরাজ্যে বিজেপি আর এস এস প্রায় অসংখ্য কর্মী নিয়োগ করেছে।
৬) কোনো মুসলিম ব্যক্তি হিন্দুত্ববাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হলে, দলবদ্ধভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করবেন না বা আক্রমণ করার মানসিকতা রাখবেন না। মনে রাখবেন, কিছু মানুষের আচরণের দায় অন্য নিরীহ মানুষের উপর বর্তায় না। এক্ষেত্রেও প্রশাসনের কাছে প্রতিকার চাইতে হবে।
৭) সম্প্রদায়গত নানানা গুজব রটতে পারে। গুজবে কান দেবেন না। গুজব শুনে উত্তেজিত হবেন না। গুজব ছড়াবেন না। কোনা অপ্রীতিকর ঘটনা শোনার পরে, যাচাই না করে অন্যের মুখে শুনে বিশ্বাস করবেন না। ঘটনা সত্যি হলে, প্রশাসনকে অবগত করুন।
যদি মনে হয়, এই সতর্কবার্তাটির মাধ্যমে একজন মানুষকেও দাঙ্গার ফাঁদে পা দেওয়া থেকে বিরত করা যেতে পারে, তাহলে প্লিজ ছড়িয়ে দিন। আপনাদের কাছে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকসহ সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষকে সতর্ক করুন। ছোটছোট স্ট্রিট কর্ণার মিটিং-মিছিল, পোস্টার-ফেস্টুন-লিফলেটের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করুন। মনে রাখবেন, সাম্প্রদায়িক কলহ-বিদ্বেষ কোনো উপকার করে না, বরং মানবতা ধ্বংসের পথ সুনিশ্চিত করে। আপনার একটি ভুল পদক্ষেপের কারণে এরাজ্যে লাভবান হবে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি-আর এস এস।