ভারতীয় আয়ুর্বেদেই করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছে চীন ,একই পথে হেঁটে করোনার ঔষধ তৈরির পথে ভারত


খ্রিস্টের জন্মের এক হাজার বছর আগে মহামুনি চরক জীবাণুনাশের ভেষজ উপায় বাতলেছিলেন। কার্যত ভারতীয় আয়ুর্বেদের সেই বিদ্যে কাজে লাগিয়েই করোনা-নিরাময়ে সাফল্যের আশা জাগাল চিন। প্রকাশ করল গবেষণাপত্র। এবং তার প্রেক্ষিতেই করোনার আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় সুসংহত জাতীয় প্রোটোকল তৈরির পথে হাঁটছে ভারত সরকার।

বৃহস্পতিবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর পোর্টালে চিনা বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশ হতেই ভারতীয় চিকিৎসক মহলে শোরগোল পড়ে যায়। যার রেশ পৌঁছে যায় খাস রাজধানী দিল্লিতে। কেন্দ্রীয় আয়ুশ সচিব ডা. রাজেশ কোটেচা ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে বলেন, “বিষয়টি জেনেছি। এর সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রচলিত অ্যালোপ্যাথ ওষুধের পাশাপাশি ভেষজের অস্ত্রে করোনাকে কীভাবে কাবু করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। শীঘ্রই এই ব্যাপারে একটি জাতীয় প্রোটোকল তৈরি করা হবে।

প্রস্তুতি অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে দেশের সব আয়ুশ হাসপাতালের কাছে ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিক্যাল কর্মীদের তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছেন ডা. কোটেচা। রাজ্যের ১৬টি আয়ুশ হাসপাতালের অধ্যক্ষও কোটেচার চিঠি পেয়েছেন। চিনা গবেষণাপত্রটি ৪ মার্চ প্রকাশিত হয়েছে ‘এলসভিয়ার’ নামক মেডিক্যাল জার্নালে। ‘সায়েন্স ডাইরেক্ট’ জার্নালেও তা ‘আপলোড’ করা হয়েছে। যাতে কোভিড-১৯ (COVID-19) পজিটিভ হওয়া রোগীদের নিরাময়ের পরিসংখ্যান পেশ করা হয়েছে। দাখিল হয়েছে সিটি স্ক্যান রিপোর্টও। যাতে পরিষ্কার, ওষুধের গুণে ধাপে ধাপে কমেছে ফুসফুসের সংক্রমণ।

ওষুধটি আদতে কী?
জটিল বা দুর্লভ কিছু নয়। উপাদান বলতে আদা, হলুদ, দারচিনি, যষ্টিমধুর মতো পরিচিত কয়েকটি মশলা। এমন প্রায় ১২টি ভেষজ-মশলা মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে পাঁচন বা ক্বাথ। তা খেয়েই নাকি চাঙ্গা হয়েছেন করোনা পজিটিভ রোগীরা। সংক্রমণ কমছে ফুসফুসের। এমনই দাবি জানিয়েছেন চিনের তিন বিজ্ঞানী, যে দেশ থেকে ছড়িয়ে সারা বিশ্বকে মৃত্যুর আতঙ্কে আপাতত সিঁটিয়ে রেখেছে নোভেল করোনা ভাইরাস

। কীভাবে খোঁজ মিলল এই দাওয়াইয়ের?

ওই গবেষকদের বক্তব্য, চিনারা প্রথাগত বা প্রচলিত ওষুধে বিশ্বাসী। যার প্রায় সিংহভাগই ভেষজ। এগুলো মানবশরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এমন প্রায় ১২টি ভেষজকে বেছে নিয়ে একটি পাঁচন বানিয়ে প্রয়োগ করা হয়েছিল কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়া ৭০১ জনের উপর। তাতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে বলে ওঁদের দাবি। ‘হেইলংজিয়াং ইউনিভার্সিটি অফ চাইনিজ মেডিসিন’-এর তিন বিজ্ঞানী জান-লিং রেন, আই হুয়া ঝাং এবং ঝি-জান ওয়াংয়ের সম্মিলিত গবেষণায় আর্থিক সহযোগিতা করেছে ‘ভলান্টারি রিসার্চ প্রোজেক্ট অফ ২০১৯- এনকোভিড নিউমোনিয়া।’ গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ২০০৩-এ সার্স সংক্রমণের সময়ও এই ক্বাথ খাইয়ে অনেক রোগীকে সুস্থ করা হয়েছিল।

এবার ট্রায়াল চালানো হয় ৭০১ জন করোনা পজিটিভের উপর। ১৩০ জন দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। একান্নটি ক্ষেত্রে উপসর্গগুলি গায়েব হয়ে গিয়েছে। ২৬৮টি ক্ষেত্রে রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। ২১২টি ক্ষেত্রে নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়নি। দেখা যায়, ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রেই দারুণ কাজ করেছে যষ্টিমধু, দারচিনি, আদার ক্বাথ। দাবির সপক্ষে রোগীদের ফুসফুসের সিটি স্ক্যান রিপোর্টও প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।

তাহলে কি করোনা সারানোর এটাই সঠিক দাওয়াই?
বিশেষজ্ঞদের মত, করোনা সংক্রমণের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সরাসরি সম্পর্ক। সুতরাং ইমিউনোমডিউলেটর ওষুধ বা পথ্য কার্যকর হতেই পারে। তবে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন। জার্নালটি নিয়ে ইতিম্যেই আলোচনা শুরু করেছেন ভারত সরকারের আয়ুশ মন্ত্রকের কর্তারা। ‘সেন্ট্রাল কাউন্সিল ফর রিসার্চ ইন আয়ুর্বেদিক সায়েন্স’-এর ডিজি অধ্যাপক কার্তার সিং ধীমানও বিষয়টি নিয়ে ওয়াকিবহাল। মত নেওয়া হচ্ছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের। পশ্চিমবঙ্গের আয়ুর্বেদ পরিষদের সহ-সভাপতি ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র বলেন, “জীবাণু নিয়ন্ত্রণে আয়ুর্বেদের অভিজ্ঞতা পাঁচ হাজার বছরের। চরক মুনি বিমানস্থানের তৃতীয় অধ‌্যায়ে ভাইরাস হানায় জনপদ ধ্বংসের কথা বলেছেন। সপ্তম অধ‌্যায়ে চিকিৎসাস্থানে ২০ রকম কৃমিনাশের (পড়ুন জীবাণু) ওষুধ বাতলেছেন। তারই একাংশ প্রয়োগ করেছে চিনারা। এই ওষুধ প্রয়োগের জন্য ভারত সরকার নীতি তৈরি করুক। রোগীদের চিহ্নিত করুক। আমাদের পরিষদ সবরকম সহযোগিতা করবে।”

খুশি রাজ্যের আয়ুর্বেদ চিকিৎসকমহলও। একে স্বাগত জানিয়ে দুই তরুণ আয়ুশ মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুমিত সুর ও বিশ্বজিৎ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “মডার্ন মেডিসিন তো কাজ করছেই। আয়ুর্বেদকেও করোনা-যুদ্ধে শামিল করা হোক। আমরাও করোনা রোগীদের চিকিৎসা করতে চাই। কেন্দ্র ও রাজ্য যৌথভাবে নীতি প্রণয়ন করুক।”

Authored By Kousik Mondal

Hi, I am Kousik Mondal from Kolkata, India. I am a professional career counselor for the past 5+ years. Love reading news and strongly believe only awareness can create a better future. And A blog scientist by the mind and a passionate blogger by ❤️heart ??

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button