অর্থনৈতিক মন্দা, টাকার মূল্য হ্রাস, জিডিপির পতন এবং সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থানের ওপর তার প্রভাব। ভারতীয় অর্থনীতির বাজারে এ নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। বাজারকে আবার ঊর্ধ্বমুখী করার জন্য নেওয়া হচ্ছে একের পর এক পদক্ষেপ। অন্ধকারের মধ্যে অবশ্য টিমটিম করে কিছুটা আশার আলো জ্বালিয়ে রাখছে হাতেগোনা কয়েকটি ইন্ডাস্ট্রি।
এর আগেও ২০০৩ সালে বিশ্বমন্দার সময় দেখা গিয়েছিলো রিসেশনের প্রকোপ। কর্ম বিচ্যুতির মাত্রা রেকর্ড ছাড়িয়েছে। গত ছয় মাসে চিত্রটা একই বরং আরো ভয়াবহ। একদিকে, গাড়িশিল্পে চাহিদা তথা উৎপাদন কমে যাওয়ায় কর্মী ছাঁটাইয়ের খাঁড়া নেমে এসেছে, অন্যদিকে, নির্মাণশিল্পেও কয়েক লক্ষ দৈনিক মজুরির ঠিকাদার কর্মী কর্মহীন বা কর্মহীনতার মুখে। অনেক কোম্পানি খরচ-খরচা কমাতে কাজ চালাচ্ছে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে।
এর মধ্যে কিছু সেক্টর রয়েছে যেগুলি এখনো পর্যন্ত বিপদ সীমাবৃত্তের বাইরে। যার মধ্যে অন্যতম হেলথ-কেয়ার ইন্ডাস্ট্রি। এটিকে এমনিতেই এ দেশের অন্যতম বৃদ্ধিপ্রবণ সেক্টর হিসাবে ধরা হয়। প্রতি বছর এই ইন্ডাস্ট্রি ১৬ – ২০% হরে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে। ২০১৭ সালে যা ১৬০০০ কোটির অঙ্কের ইন্ডাস্ট্রি ছিল, সেটা ২০২০ সালের মধ্যে ২৮০০০ কোটিতে পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। মেডিকেল, হাসপাতাল, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, মেডিকেল ইনশিওরেন্স, আউটসোর্সিং টেলিমেডিসিন এরকম একাধিক ক্ষেত্র সম্বলিত হেলথ-কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিতে তাই কাজের পরিমাণ নেহাত কম নয়। ২০১৮তেই এই ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লক্ষ ছাপিয়েছে।
এর পাশাপাশি টক্কর দিচ্ছে পর্যটন শিল্প বা টুরিজম ইন্ডাস্ট্রি। দেশের জিডিপিতে অবদানের দিক থেকে ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম ইন্ডাস্ট্রি সারা পৃথিবীতে অন্যান্য দেশের তুলনায় ৭ম স্থানে রয়েছে। আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে এই ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসা ৩২.৫ ট্রিলিয়নে পৌঁছনোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতি বছরই ৮ – ৯ % হরে এই ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসা বৃদ্ধি পায়। বোঝাই যাচ্ছে, এরকম মন্দার দিনেও এই ইন্ডাস্ট্রি কীভাবে বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছে কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যের ব্যাপারে।
এরপর আসা যাক এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং সেক্টরে। এই সেক্টরকে সাহায্য করে আমাদের দেশের জনসংখ্যার আধিক্য। ২০২০ সালের মধ্যে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত প্রার্থীর দেশে পরিণত হব। সারা দেশে শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানই রয়েছে ৪০ হাজারের কাছাকাছি, যা প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান। আমেরিকার পর ভারতে সবথেকে বেশি ই-লার্নিং ব্যবস্থা রয়েছে। অ্যাপেল, মাইক্রোসফট-এর মতো কোম্পানিগুলির কেন আমাদের দেশের প্রতি এতো ঝোক সেটা এবার বোঝাই যাচ্ছে। সরকারের ছাড় রয়েছে ১১০% এফডিআই আমাদের শিক্ষা সেক্টরের ওপর। ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত হিসাব বলছে প্রায় ২.৪৭ বিলিয়ন ইউএসডি বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে এই সেক্টরে।
এর পাশাপাশি রিটেল, ফুড, সোলার এনার্জি, হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি বর্তমান সময়ের নিরিখে কর্মহীনতার বা কর্মচ্যুতির হার তুলনামূলক অনেক কম।
নিজের পেশাগত অভিজ্ঞতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতার উপর নির্ভর করে নিজেদের কর্মজীবনকে আরও শক্তিশালী করতে এই সমস্ত সেক্টরগুলিকে বেছে নিতেই পারেন নিজেদের কর্মসংস্থানের জন্য। তবে কিছুদিনেই মধ্যেই আর্থিক মন্দা কাটিয়ে অন্যান্য সেক্টরগুলিও পুনরুজ্জীবিত হবে এমনটাই আশা রয়েছে কর্মপ্রার্থী থেকে অর্থনৈতিক মহলে।