এসময় ব্যুরো: আমেরিকায় থাকা এক প্রবাসী ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার করোনা ভাইরাসকে মারাত্মক সংক্রমক আর প্রাণঘাতী ভাইরাস বলেছেন। এর সাথে সাথে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে (Mamata Banerjee) আবেদন করে বলেছেন যে, তিনি যেন এই ভাইরাসকে হালকা ভাবে না নেন। করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ক্ষতিকারক স্ট্রেনগুলি এ রাজ্যের মানুষদের মারাত্মক ভাবে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে না, এটা হয়তো পশ্চিমবাংলার পক্ষে সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু তাই বলে এটার সুযোগ নিয়ে প্রশাসন যদি গা-ছাড়া মনোভাব দেখায়, তবে তা চরম বিপদ ডেকে আনতে পারে, হু হু করে বাড়িয়ে তুলতে পারে মৃত্যুমিছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে এমনটাই জানালেন ইন্দো-আমেরিকান বংশোদ্ভুত বাঙালি চিকিৎসক ডক্টর ইন্দ্রনীল বসু রায় ।
আমেরিকার টেনেসের চিকিৎসক ইন্দ্রনীলবাবু একজন বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, “আমি যেটা উল্লেখ করতে চাই সেটা হল পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা অত্যন্ত বেশি। ঘনবসতিপূর্ণ এ রাজ্যে একটি নির্দিষ্ট জায়গাতেও যদি ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে, তবে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে হু হু করে। হাজার হাজার মানুষ সংক্রামিত হবেন, তার মধ্যে কিছু অংশ মারা গেলেও সেই সংখ্যা অনেকটাই দাঁড়াবে।”
সেই কারণেই চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে কড়া ভাবে। যাতে ভাইরাসের মারণ থাবা কিছুতেই ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। কিছু পশ্চিমী দেশ যা যা পদক্ষেপ করছে অসুখ রুখতে, তা অনুসরণ করতে হবে। তাঁর কথায়, “আমরা কোনও কিছুকেই আলগা দিতে পারব না। কারণ একবার সংক্রমণ বড় আকারে ছড়িয়ে গেলে আফশোস ছাড়া কিছু করার থাকবে না। আজ কড়া হাতে পরিস্থিতি না সামলালে এবং তাড়াতাড়ি রোগনির্ণয় করতে না পারলে পরে কেবল বসে বসে মৃত্যুমিছিল গুনতে হবে।”
তিনি আরও লেখেন, “এই জন্যই আমি অনুরোধ করছি, দয়া করে এই ঘাতক ভাইরাসটিকে নিকেশ করার জরুরি পদক্ষেপ করুন। নইলে এটি ডেডলাইন পার করে ফেলবে, বিপদ ঘটাবে। লকডাউন, টেস্টিং, আইসোলেশনে আরও জোর দিন। পশ্চিমের দেশগুলির মতোই কড়া হোন শৃঙ্খলায়।”
কার্ডিওলজিস্ট এবং কার্ডিয়াক ইলেক্ট্রোফিজিওলজিস্ট চিকিৎসক, ডক্টর ইন্দ্রনীল বসু রায় আমেরিকা ও ভারত এই দু’দেশেরই একাধিক মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন, কাজ করেছেন জনস্বাস্থ্য নিয়ে।
তাঁর মতে, বাংলায় কোভিড ১৯ রোগীদের মৃত্যু হলে ডেথ সার্টিফিকেটে কী লেখা হবে এ নিয়ে আলাদা কমিটি গড়ে মতামত নেওযা অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার। তিনি চিঠিতে বলেন, “এই ধরনের সংক্রমণ লুকিয়ে রাখা বা সংখ্যা কম করে দেখানো, আইসোলেশনে গাফিলতি করা– এ সবই গণমৃত্যু ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে পরিস্থিতি। আমি নিশ্চিত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এমনটা আপনি কখনও চাইবেন না।”
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুসারে, মঙ্গলবার সকালে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই বেড়ে হয়েছে ৭০ হাজার ৭৫৬। মৃত্যু হয়েছে ২২৯৩ মানুষেকর। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গেই আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়েছে দু’হাজার। মৃত্যু হয়েছে ১৯০ জনের।