প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ছাদে দেশি মুরগি পালন; মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকা

দেশীয় পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন

দেশী মুরগি উৎপাদনে উন্নত কৌশল

গ্রাম এলাকায় প্রায় প্রতিটি পরিবার দেশী মুরগি পালন করে থাকে। এদের উৎপাদন ক্ষমতা বিদেশী মুরগির চেয়ে কম। উৎপাদন ব্যয়ও অতি নগণ্য। এটি অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের মাংস ও ডিমের মূল্য বিদেশী মুরগীর তুলনায় দ্বিগুণ, এর চাহিদাও খুবই বেশী। দেশী মুরগির মৃত্যুহার বাচ্চা বয়সে অধিক এবং অপুষ্টিজনিত কারনে উৎপাদন আশানুরূপ নয়। বাচ্চা বয়সে দেশী মোরগ-মুরগির মৃত্যুহার কমিয়ে এনে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবস্থা করলে দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করা সম্ভব।

উল্লেখিত অবস্থার আলোকে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশী মুরগি উৎপাদনে উন্নত কৌশল শীর্ষক প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছে। এ কৌশল ব্যবহার করে খামারিরা দেশী মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করে পারিবারিক পুষ্টি ও আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।

উদ্দেশ্য:

  • সম্পুরক খাদ্য, রানীক্ষেত ও বসন্তের প্রতিষেধক প্রদান করে এবং বন্য জন্তুর কবল থেকে মুক্ত রেখে দেশী মুরগি, বিশেষ করে ছোট বাচ্চার মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা যায়।
  • দেশী মুরগির দৈহিক ওজন ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি করা।

প্রযুক্তি ব্যবহারের পদ্ধতি:

  • প্রযুক্তিটি গ্রামীণ পর্যায়ে সকল গৃহস্থ পরিবারই ব্যবহার করতে পারবেন।
ভারত সরকার অনুমোদিত প্যান কেন্দ্র খুলতে চান ? # CLICK HERE
सर्दियों में मुर्गी पालन ! | | Pashudhan praharee

দেশীয় পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন

১৭ অক্টোবর ১৫।।  অনেকেই জানতে চেয়ে ছিলেন যে সল্প মূলধন দিয়ে কি ব্যবসা করা যায়। তাদের জন্য দেশি মোরগ হতে পারে একটি সময়পযোগি ব্যবসা। স ল্প জায়গায় অল্প টাকা বিনিয়োগ করে সল্প সময়ে অধিক আয় করা যায়। বসত বাড়িতে মুরগি চাষ হচ্ছে একটি সহজ এবং লাভজনক কাজ। বাড়ির গৃহিণীরা খামার স্থাপন ও পরিচালনা করতে পারে। একটি মোরগ একটি মুরগির তুলনায় দ্রুত বাড়ে আর বাজারে দেশি মোরগের প্রচুর চাহিদা থাকায় মোরগ বিক্রি করতে তেমন বেগ পেতে হয়না এবং বাজারে ভাল দাম ও পাওয়া যায়।

দেশি মোরগ আবদ্ধ ও ছেড়ে পালন করা যায়। তবে ছেড়ে পালন করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় কারন মোরগ নিজের খাদ্য নিজে কুড়িয়ে খায়।এরা মুক্ত আলো বাতাস বিশেষ করে প্রচুর সূর্য কিরণে বেড়ে উঠে যা তাদের শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ তৈরি করতে সাহায্য করে। এদের খাবারের জন্য তেমন কোন খরচ করতে হয় না।

মোরগ নির্বাচনঃ- দেশি মোরগ বা মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের জন্য তেমন কোন হ্যাচারি গড়ে ওঠেনি তাই নিজেকে ই দেখে শুনে সুস্থ সবল ও নিরোগ মোরগ সংগ্রহ করতে হবে। মূলত ৪০০-৬০০ গ্রামের মোরগ দিয়ে শুরু করলে ভাল ফলাফল আশা করা যায়। কারন ঐ সময়ের পর মোরগ গুলো দ্রুত বাড়ে এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা পেলে ২ মাস পর মোরগ গুলোর গড় ওজন ২ কেজির উপর হবে। প্রতি কিলো দেশি মোরগের মূল্য কেমন আছে সেটা নাই বা বললাম। আপনারা নিজেরা লাভ-ক্ষতি বের করে নিন।

মুরগির ঘর তৈরির নিয়মঃ- মোরগের জন্য খোলামেলা ঘর হতে হবে। ১.৫ মিটার (৫ ফুট) লম্বা X১.২ মিটার (৪ ফুট) চওড়া এবং ১ মিটার (৩.৫ ফুট) উঁচু ঘর তৈরি করতে হবে। ঘরের বেড়া বাঁশের তরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে। এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে। বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে। ঘরের চাল খড়, টিন বা বাঁশের তরজার সাথে পলিথিন ব্যবহার করে তৈরি করা যাবে। এরকম ঘরে ১০-১৫টি মোরগ পালন করা যায়।

খাবারঃ- বাড়ির প্রতিদিনের বাড়তি বা বাসী খাদ্য যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতা পাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি মুরগি কুড়িয়ে খায়।

পরিচর্যাঃ- ছেড়ে পালন পদ্ধতিতে মুরগি পরিচর্যার জন্য সময় বা লোকজনের তেমন দরকার পড়ে না। তারপরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। সকালে মুরগির ঘর খুলে কিছু খাবার দিতে হবে। সন্ধ্যায় মুরগি ঘরে ওঠার আগে আবার কিছু খাবার দিতে হবে। ঘরে উঠলে দরজা বন্ধ করে দিতে হবে।মুরগির পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ২.৫ সে.মি. (১ ইঞ্চি) পুরু করে বিছাতে হবে। পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে এবং কিছুদিন পর পর পরিষ্কার করতে হবে। এ পদ্ধতিতে দেশি মোরগ পালন করা গেলে প্রায় তেমন কোন খরচ ছাড়াই ভাল একটা মুনাফা পাওয়া যাবে।

ভারত সরকার অনুমোদিত প্যান কেন্দ্র খুলতে চান ? # CLICK HERE

দেশি মুরগি পালনে যত্ন নিতে হবে

সাকুল্যে ৫-১০টি মুরগি। বাড়ির আশপাশে চরে বেড়িয়ে বাড়ির উচ্ছিষ্ট খাবার, পোকামাকড়, কেঁচো, কচি ঘাসপাতা খায় তারা।  সে অর্থে প্রতিপালনের কোনও খরচ নেই বললে চলে। আপাতদৃষ্টিতে লাভজনক মনে হলেও আসলে অতটা লাভ হয় না। ছাড়া মুরগি অন্যত্র ডিম পেড়ে আসে, কখনও রোগে মারা যায়। তাই দেশি মুরগির পালন লাভজনক করতে হলে কিছু নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার, সে জাত নির্বাচনেই হোক বা রোগ পরিচর্যায়।

প্রথমে আসি মুরগির জাতে। ব্রয়লার খামারের হাইব্রিড মুরগি উঠোনে ছেড়ে পালন করা যায় না। তাই খাঁটি জাতগুলোকে বাছতে হবে। যেমন, রোড আইল্যান্ড রেড (আরআইআর) বা ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প। রঘুনাথপুর, বালুরঘাটের রাজ্য মুরগি খামারে লাল বা আরআইআর এবং কালো বা  ব্ল্যাক অস্ট্রালর্প মুরগির বাচ্চা পাওয়া যায়। ইদানীং কালে বনরাজা, গিরিরাজা, গ্রামরপ্রিয়া ইত্যাদি জাত কৃত্রিম ভাবে তৈরি করা হয়েছে।

মুরগি রাতে রাখার জন্য ঘর বানাতে হবে। মাটি থেকে সামান্য উপরে বাঁশ বা কাঠ দিয়ে কম খরচে খড় বা টালি ঢেকে তৈরি ঘরগুলো যেন শুকনো, পরিষ্কার হয়। আর আলো-বাতাস খেলে। প্রতিটি পাখির জন্য গড়ে তিন বর্গফুট জায়গা ধরতে হবে।

দেশি মুরগি চরে বেড়িয়ে তার খাবার সংগ্রহ করে নিলেও এ ধরনের উন্নত জাতের মুরগির পুরো উৎপাদন ক্ষমতা কাজে লাগাতে অল্প পরিমাণে সুষম খাবার দেওয়া প্রয়োজন। চালের গুঁড়ো (৩০০ গ্রাম), খুদ বা গম ভাঙা (২৮০ গ্রাম), সর্ষে/ তিল খোল ( ২০০ গ্রাম), মাছ বা সোয়াবিন গুঁড়ো (২০০ গ্রাম), ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ যেমন সাপ্লিভিট এম (২০ গ্রাম)  মিশিয়ে মুরগির সংখ্যা অনুযায়ী মাথা পিছু ৫০-৭০ গ্রাম হিসাবে অর্ধেক সকালে ও অর্ধেক বিকালে খেতে দিতে হবে। রাতে মুরগি রাখার যে ঘর আছে, সেখানে নির্দিষ্ট পাত্রে জল ও খাবার দিতে হবে। যাতে সকালে ঘর থেকে বেরনো বা পরে ঘরে ঢোকার সময় ওই খাবার ও জল খাওয়া অভ্যাস তৈরি হয়। এই অভ্যাস থাকলে ওষুধ গুলে খাওয়াতে সুবিধা হয়। মুরগির খাবার সবসময় শুকনো ও পরিষ্কার রাখতে হবে। বেশি দিন জমা রাখলে  ছত্রাক সংক্রমণ ঘটে।

সংকরায়ণ পদ্ধতিতে দেশি মুরগির সঙ্গে উন্নত মোরগ রেখে প্রাকৃতিক প্রজনন ঘটিয়ে দেশি মুরগির জিনগত উৎকর্ষতা বাড়ানো যায়। প্রতি ১০টি দেশি মুরগি পিছু ১টি উন্নত জাতের মোরগ রাখতে হবে। যে সংকর মুরগি জন্মাবে, তা দেশি মুরগির চেয়ে দ্রুত (৪-৫ মাস বয়সে) এবং প্রায় দ্বিগুণ (বছরে ১২০-১৪০টি) ডিম দেবে।

রোগব্যাধি মুরগি পালনের অন্যতম সমস্যা। তাই নিয়মিত মুরগির ঘর চুন বা জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। প্রতি মাসে একবার করে কৃমিনাশক ওষুধ (পাইপেরাজিন তরল বয়স অনুযায়ী ০.৫-১ মিলি) জলে গুলে খাওয়াতে হবে। রানিক্ষেত বা বসন্তের মতো কয়েকটি সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত টিকাকরণ জরুরি। টিকা দেওয়ার দশ দিন আগে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। টিকাকরণ বিশেষত রানিক্ষেত টিকা ৭-১০ দিন বয়সে নাকে বা চোখে এক ফোঁটা, ৩০ দিন বয়সে আর এক বার, ২ মাস বয়সে প্রথম কৃমির ওষুধ এবং আড়াই মাস বয়সে ডানার তলায় ০.৫ মিলি ইঞ্জেকশন অবশ্যই নিতে হবে। ঝিমুনি, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, পাতলা বা রক্ত পায়খানা নজরে এলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাকট্রিম ডিএস বা সেপম্যাক্স (১টি বড়ি ১০টি বড় বা ২০টি বাচ্চা মুরগির জন্য) খাবারে বা জলে গুলে ড্রপারে করে খাইয়ে দিতে হবে (৩/৫/৭ দিন)।

Authored By Kousik Mondal

Hi, I am Kousik Mondal from Kolkata, India. I am a professional career counselor for the past 5+ years. Love reading news and strongly believe only awareness can create a better future. And A blog scientist by the mind and a passionate blogger by ❤️heart ??

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button